শরীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে নানান রোগ জমা হতে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম ক্ষতিকারক হলো এই স্ট্রোক। কখন যে এটি এসে হানা দেবে শরীরে তা কেউ বলতে পারে না। তবে এর লক্ষন এবং একই আটকানোর উপায় আগে থেকে জানা থাকলে সাবধান হওয়া অবশ্যই যায়। আমাদের কিছু গাফিলতি এবং অনিয়মিত জীবন নির্ধারণের জন্যও স্ট্রোক হতে পারে। কিছু জিনিস মেনে চললে এবং স্ট্রোকের লক্ষণ গুলো জানা থাকলে এই ভয়ঙ্কর বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব হতে পারে। স্ট্রোকের লক্ষণ গুলো জানলে সাথে সাথে তার ব্যবস্থা নিলে বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই আগে ভালো করে জেনে নেওয়া যাক এই স্ট্রোক সম্বন্ধে এবং তার লক্ষণ সম্বন্ধে। তার সাথে এও জেনে নেওয়া যাক কি কি সচেতনতা গ্রহণ করা উচিত এই ভয়াবহ বিপদের হাত থেকে বাঁচার জন্য।
স্ট্রোক কি?
স্ট্রোক হলো এমন একটি রোগ যা মস্তিষ্কের শিরা বা ধমনির গুলোতে প্রভাব ফেলে মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। আর কোন কারনে এই মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত প্রবাহ বাধা পেলে মস্তিষ্কে অবস্থিত কোষকলার মৃত্যু হয় এবং সেটি শারীরবৃত্তীয় স্বাভাবিক কার্য সম্পাদনের বাধা সৃষ্টি করে। এই মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহের পরিমাণ হঠাৎ করে কমে গেলে তাকেই বলা হয় স্ট্রোক। এটি শরীরের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকারক। এর থেকে শরীরের কোন অংশে প্যারালাইসিস, ব্রেইন ড্যামেজ, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
স্ট্রোকের লক্ষণ সমূহঃ
এমন কিছু লক্ষণ আমাদের শরীরে দেখা যায় যা থেকে বোঝা যায় যে স্ট্রোক হয়েছে। অনেকে বুঝতে পারেন না এবং এড়িয়ে যান লক্ষণগুলো তখনই হয়ে যায় মারাত্মক বিপদ। তাই স্ট্রোকের লক্ষণ গুলো ভালোভাবে জানা থাকলে ঘটনাস্থলে সহজে তা নির্ধারণ করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া যায় এবং রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়।
জেনে নেওয়া যাক লক্ষণগুলোঃ
১। দেহের একপাশ দুর্বল ও অসাড় হয়ে যায়।
২। মুখের মাংস পেশিতে রক্ত সরবরাহকারী স্নায়ুগুলো অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয় বলে মুখের অর্ধেক অসাড় হয়ে পড়ে।
৩। অসহ্য তীব্র মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়।
৪। স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়।
৫। স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায় কিংবা কথা বলে অস্পষ্টতা এসে যায়।
৬। মাংসপেশীর স্নায়ুগুলো রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয় বলে স্ট্রোক হলে মাংসপেশি শিথিল হয়ে যায় এবং চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি করে।
এই লক্ষণগুলো যদি দেখা যায় তাহলেই বুঝবেন যে ওই ব্যক্তি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে এবং তাকে দ্রুত কোন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করা গেলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়।
স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়ঃ
১। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
স্ট্রোকের অন্যতম একটি কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ। অতিরিক্ত চিন্তার ফলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় রক্তচাপ ওঠা নামা করছে, রক্তচাপের প্রকৃতির এই ধরনের তারতম্য হলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। রক্তচাপ সাধারণত ১২০/৮০ বা ১৪০/৯০ এর নিচে রাখার চেষ্টা করুন। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে লবণ কম খান (দিনে ১৫০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ খাবেন না)। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ কাপ ফল এবং সবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন।
২। ওজন কমান
শরীরে অতিরিক্ত মেদ স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বহু গুণ। অতিরিক্ত মেদের কারণে শরীরের কোলেস্টরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক কাজে বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে।
৩। ব্যায়াম করুন
সপ্তাহে ৫ দিন ২০ থেকে ২৫ মিনিট ব্যায়াম করুন। তা জগিং হোক বা স্কিপিং বা জোরে হাঁটা হোক কিংবা যোগাসন, যেটা করতে আপনি পছন্দ করেন সেটি করুন। সকালে এবং দুপুরে খাবার আগে ১৫ মিনিট হাটুন। এটি আপনার স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দেবে।
৪। ধূমপান ত্যাগ করুন
ধূমপান স্ট্রোকের প্রধান কারণ। এটি আমাদের ফুসফুসকে নষ্ট করে দেয়। ধূমপানের কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়়িয়ে দেয়। ড. রোস্ট বলেন “নিয়মিত ব্যায়াম ওজন কমানোর পাশাপাশি ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে, স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য”।
৫। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখুন
উচ্চ ব্লাড সুগার রক্তনালী ক্ষতি করে এর অভ্যন্তরে বাঁধা সৃষ্টি করে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখুন। ডায়েট মেনে চলুন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন।
৬। হৃদযন্ত্রের দিকে নজর রাখুন
অনিয়মিত হার্ট বিট ধমনীতে বাঁধা তৈরি করে। যা কারণে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। শ্বাস কষ্ট বা হার্টের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরান্নপন্ন হওয়া উচিত।
চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ করুনঃ