কোনো দম্পতি এক বছর জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ছাড়া একই সাথে বসবাস ও মিলনের পরও যদি সন্তান ধারণ না করে থাকেনতাকে ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব বলে। এটি হতে পারে প্রাথমিক যাদের কখনোই গর্ভসঞ্চারণ হয়নি অথবা মাধ্যমিক যাদের আগে গর্ভসঞ্চারণের পর এখন আর গর্ভসঞ্চারণ হচ্ছে না। সাধারণত ৮০ শতাংশ দম্পতির চেষ্টার প্রথম বছরের মধ্যেই সন্তান হয়ে থাকে। ১০ শতাংশ দম্পতির দ্বিতীয় বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। বাকি ১০ শতাংশের কোনো না কোনো কারণে সন্তান ধারণে অসুবিধা হয়ে থাকে এবং তাদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা দরকার। এই না হওয়ার পেছনে স্বামীস্ত্রী দুজনের যেকেউই কারণ হতে পারেন। আবার সমিমলিত অসুবিধার কারণেও হতে পারে।

নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণসমূহঃ

Google

বন্ধ্যাত্বের নানা কারণ থাকে। কেবল নারী নয়, পুরুষেরও বন্ধ্যাত্ব থাকতে পারে। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে কয়েকটি সমস্যা থাকলে ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্বের আশঙ্কা তৈরি হয়।এখন জেনে নেওয়া যাক সেই  কারণগুলো-

১।পলিসিস্টিক ওভারিঃ

অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ, ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে পড়া, তলপেটে ব্যথা বা ভারীভাব ইত্যাদিই পলিসিস্টিক ওভারির লক্ষণ।সমস্যা চলতে থাকলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যায় ভুগলে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ব্রণ, বন্ধ্যাত্বের সমস্যা তো হয়ই, ভবিষ্যতে হাই কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসে ভোগার আশঙ্কাও থাকে।ওজন কমানো এর একমাত্র নিরাময়ের পথ।

গৌতম খাস্তগীর – আইভিএফ সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার জন্য BIRTH CLINIC দেখুন।

২।ফাইব্রয়েডের সমস্যাঃ 

ফাইব্রয়েড হল ইউটেরাসের টিউমার।ইউটেরাসের মাসল লেয়ার থেকে উৎপন্ন হয় এই ধরনের টিউমার, সিঙ্গল বা মাল্টিপল টিউমার হতে পারে। কখনও কখনও এটা ইউটেরাইন ক্যাভিটির মধ্যে থাকে, কখনও বাইরে বেরিয়ে আসে। সাধারণত এর ফলে প্রবল রক্তপাত হয় ঋতুস্রাবের সময়, কখনও কখনও পেটে ব্যথা থাকে। এর ফলে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।তবে সাধারণত এই ধরনের টিউমার থেকে ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে না।

৩।এন্ডোমেট্রিওসিসঃ

এন্ডোমেট্রিওসিস মহিলাদের বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ।এই রোগের প্রাথমিক সমস্যা হচ্ছে পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা। সাধারণত এঁদের খুব বেশি রক্তপাত হয়।যাদের  এন্ডোমেট্রিওসিস আছে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সময়ে তারা অস্বস্তিতে ভোগেন। এন্ডোমেট্রিওসিস বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ হতে পারে। ঋতুস্রাবের সময় পেলভিক ও তলপেট অঞ্চলে যন্ত্রণা হলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এগুলি পেলভিক এন্ডোমেট্রিওসিসের লক্ষণ।

৪।একাধিক যৌনসঙ্গী বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারেঃ

নিরাপদ ও দায়িত্বপূর্ণ যৌনতার অভ্যেস না থাকলে ভ্যাজাইনাল ও পেলভিক ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ক্ল্যামাইডিয়া নামের একটি ব্যাকটেরিয়া থেকে পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজ়িজ় হতে পারে। তা থেকে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যার ফলে বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়।

৫।মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপানঃ

আধুনিক জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেয়েরা বাইরে বেরিয়েছেন, তাঁদের জীবনে স্ট্রেস বেড়েছে।ফলে তা কমানোর জন্য অনেক মহিলাই ধূমপান ও মদ্যপানকে বেছে নিচ্ছেন।তবে অত্যাধিক ধূমপান মহিলা এবং পুরুষ উভয়েরই বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট কমতে আরম্ভ করে। শুক্রাণুর মানও পড়তে থাকে। মেয়েদের নানা রকম হরমোনের সমস্যায় পড়তে হয়। যৌন জীবনেও ছায়া ফেলে স্ট্রেসের ছাপ।

এইসব কারণ ছাড়াও কিছু জেনিটাল কারণও থাকে, যা একজন নারীর সন্তান ধারণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।সেই কারণগুলি হলঃ 

১।যোনীর জন্মগত অপরিণতি, যোনী ক্রিয়াশীল না থাকা প্রভৃতি।

২।সারভিক্স ঠিকমত না থাকা বা রোগগ্রস্ত সারভিক্স।

৩।সারভিক্স উপরে উঠে যায় ও তার জন্য যৌন ক্রিয়াতে ব্যাঘাত।

৪।জরয়ুর কাজের গোলমাল, তার গঠন ঠিকমত না হওয়া।

৫।জরায়ুর সন্তান ধারনে অক্ষমতা, তার সঙ্গে যোনিনালীর সম্পর্ক না থাকা।

৬।ডিম্বনালীতে অবস্ট্রাকশন জনিত বাধা। ওভারীর কাজ ঠিকমত না হওয়া, ওভারিয়ান টিউমার।

৭।গনোরিয়া, সিফিলিস প্রভৃতি রোগ।

বন্ধ্যাত্বের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা

পুরুষের ক্ষেত্রে সিমেন (বীর্য) পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। সিমেন পরীক্ষার রিপোর্ট যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে স্বামীর উল্লেখযোগ্য কোনো সমস্যা নেই বলা যেতে পারে। মূলত সিমেনে উপযুক্ত পরিমাণে গতিশীল সপার্মের অভাবই পুরুষের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের প্রধান কারণ। যদি সিমেন পরীক্ষায় ইনফেকশনের লক্ষণ থাকে তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা দরকার হয়। এছাড়া ধূমপান, অ্যালকোহল হতে বিরত থাকা, ওজন কমানো, ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণ রাখা ইত্যাদি সন্তান উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। সর্বোপরি সুস্থ জীবন-যাপন বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকলে ওটও একটি উপযুক্ত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ডিম্বাণু নিঃসরণের সময়ে জরায়ুর ভেতরে স্বামীর বীর্য বিশেষভাবে প্রসেসিংয়ের পর সূক্ষ্ম ক্যাথেটারের মাধ্যমে দিয়ে দেয়া হয়।
তবে শুক্রাণুর সংখ্যা ৫ মিলিয়নের নিচে বা শুক্রাণুর গঠনগত ত্রুটি থাকলে বা নড়াচড়া কম থাকলে ইকসি (ICSI) দরকার হয়। ইকসি পদ্ধতিতে একটি ডিম্বাণুর মধ্যে একটি সুস্থ শুক্রাণু ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করিয়ে ডিম্বাণু নিষিক্ত করা হয়। যেসব পুরুষের ক্ষেত্রে বীর্যবাহী নালিতে বাধা থাকে তাদের বেলায় সার্জিক্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে (MESA, TESA, PESA-এর মাধ্যমে) শুক্রাণু সংগ্রহ করে ইকসি করা যায়। পুরুষের বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে ইকসি অত্যন্ত উন্নত ধরনের চিকিৎসা এবং এই চিকিৎসাব্যবস্থা সব সেন্টারে থাকে না।
পুরুষের ক্ষেত্রে যেমন সিমেন পরীক্ষা জরুরি, তেমনি মেয়েদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হরমোন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ডিম্বাশয়ের জটিলতা তথা প্রতি মাসে ডিম্বাশয় হতে ডিম্বাণু নিঃসরণ হচ্ছে কিনা তা নির্ণয় করা হয়।

এই রোগ সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুনঃ

আরও পড়ুনঃবিস্তারিতভাবে জেনে নিন মেডিকেল ট্যুরিজম সম্বন্ধে!

Leave a comment