প্রোস্টেট ক্যান্সার পুরুষদের অন্যতম কমন একটি ক্যান্সার। পুরুষদের একটি প্রোস্টেট গ্রন্থি আছে, যেটি দিয়ে মূত্র এবং বীর্য প্রবাহিত হয়। মুত্রথলির নিচ থেকে যেখানে মুত্রনালী বের হয়, সেটির চারপাশ জুড়ে এই গ্রন্থিটি বিদ্যমান। এই গ্রন্থির ক্যান্সারকেই প্রোস্টেট ক্যান্সার বলে।মার্কিন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট-এর গবেষণা অনুযায়ী, ফুসফুসের ক্যান্সারের পরই দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী প্রস্টেট ক্যান্সারের রোগীরা। 

প্রোস্টেট ক্যানসারের কারণ কি? 

প্রোস্টেট ক্যান্সার সাধারণত গ্রন্থিময় কোষে শুরু হয়। এটাকে বলা হয় adenocarcinoma। এই ক্যান্সার হলে প্রোস্টেটের গ্রন্থি কোষের আকৃতিতে ছোট ছোট পরিবর্তন শুরু হয়, যেটাকে বলা হয় prostatic intraepithelial neoplasia (PIN)। এটা খুব ধীরে ধীরে হয় এবং ক্যান্সারের বেশ অগ্রগতি না হলে বাহির থেকে বোঝা যায় না।৫০ বছরের উপরে প্রায় অর্ধেক মানুষের PIN আছে। হাই-গ্রেড PIN থাকলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে।  তবে লো-গ্রেড PIN নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেয়।প্রোস্টেট ক্যান্সার যদি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার আগেই ধরা পড়ে তাহলে ট্রিটমেন্ট করে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব। তবে এটি যদি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে বেশ বিপজ্জনক হয়ে দাড়ায়।

এই রোগ প্রতিরোধের উপায় কী? 

রোগ হওয়ার আগে তা প্রতিরোধ করাই শ্রেয়।  ৫০ বছর বয়সের পর পুরুষদের প্রস্টেট ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়তে থাকে।  যদি  ৫০ বছর বয়সের পর প্রতি বছর নিয়ম করে প্রস্টেট পরীক্ষা করান। তা ছাড়া, রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। দেখতে হবে রক্তে পিএসএ (প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন) কতটা আছে। পিএসএ-র মাত্রাই বলে দেবে আপনার ক্যান্সারের আশঙ্কা। প্রস্টেটে কোনও রকম স্ফীতি দেখা গেলে দেরি না করে বায়োপ্সি করাতে হবে। এখন চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। ফলে, ভবিষ্যতে ক্যান্সার হতে পারে বোঝা গেলে বা একদম গোড়ায় ধরা পড়লে ভয় থাকে না। 

এই রোগের লক্ষণগুলি কী? 

একদম শুরুর দিকে প্রস্টেট ক্যান্সারের কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। যখন রোগটি অ্যাডভান্সড স্টেজে চলে যায়, তখন একে একে লক্ষণ প্রকট হতে শুরু করে।

১) তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা,

২) প্রস্রাব কিংবা বীর্যের সঙ্গে রক্ত,

৩) মূত্রনালিতে কিছু আটকে আছে বোধ হওয়া ইত্যাদি প্রস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ।

৪) অ্যাডভান্সড স্টেজে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

৫) যন্ত্রণা তলপেট থেকে গোটা কোমরে ছড়িয়ে পড়ে। 

প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা কী? 

ক্যান্সার কোন স্টেজে আছে, তার উপর প্রোস্টেট ক্যান্সার এর চিকিৎসা নির্ভর করে।

প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসাঃ যদি টিউমার ছোট হয় এবং ক্যান্সার এখনও শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়ায়নি, তাহলে নিচের একটা উপায়ে ট্রিটমেন্ট করা হয়।

সাবধানে অপেক্ষা এবং পর্যবেক্ষণঃ PSA blood levels নিয়মিত চেক করা হয়, তবে কোনো ইমিডিয়েট একশন নেয়া হয় না। অনেক রোগীর ট্রিটমেন্ট এর দরকার হয় না।

Radical Prostatectomy: অপারেশনের মাধ্যমে প্রোস্টেটটাকে অপসারিত করে ফেলা হয়। অপারেশনের জন্য হাসপাতালে সাধারণত ৮-১০ দিন থাকতে হয়, আর সম্পুর্ণ সুস্থ হতে ৩ মাস মতো সময় লাগে। একটু বেশি খরচ দিয়ে যদি Robotic keyhole অপারেশন করানো হয়, তাহলে হাসপাতালে কম সময় থাকা লাগে।

Brachytherapy: প্রোস্টেটে রেডিওএক্টিভ সিড রোপন করা হয়, যেটা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে।

প্রাথমিক স্টেজে রেডিয়েশন থেরাপির সাথে সাথে ৪-৬ মাসের জন্য হরমোন থেরাপিও দেয়া হতে পারে।

এডভান্সড ক্যান্সার বেশি আক্রমণাত্মক এবং এটা শরীরের অনেকাংশে ছড়িয়ে পড়েছে। এডভান্সড স্টেজে কেমোথেরাপি দেয়া হতে পারে। এটা ক্যান্সার সেলকে মেরে ফেলে।

Androgen deprivation therapy (ADT) হচ্ছে একটি হরমোন ট্রিটমেন্ট যেটা androgen এর প্রভাবকে কমিয়ে দেয়। androgen হচ্ছে পুরুষদের একটি হরমোন যেটি ক্যান্সারকে বাড়তে উদ্দীপিত করে। ADT androgen এর প্রভাবকে কমিয়ে দিয়ে ক্যান্সারের বাড়া কমানো এবং এমনকি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারে।রোগীদের সাধারণত লং-টার্ম হরমোন থেরাপির প্রয়োজন হয়।যদি হরমোন থেরাপি কাজকরা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলেও অন্যান্য চিকিৎসার উপায় থাকতে পারে।

 

 

Leave a comment