ক্যানসার একটি ঘাতক রোগ। সেই ক্যানসার যদি হয় লিভার অর্থাৎ যকৃতে তবে তা সত্যিই খুবই চিন্তার বিষয়। এমনিতে এই রোগের সম্বন্ধে যথেষ্ঠ জনসচেতনতা না থাকায় প্রথম দিকে ধরাই যায় না। ফলে চুপিসারে মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে এই মারণরোগ।
সাধারণত লিভার টিউমার থেকে হয় লিভার ক্যানসার। তবে সবসময় টিউমার থেকেই যে ক্যানসার হবে তার কোনো কারণ নেই। কারণ, টিউমারের মধ্যে কোনো কোনোটা ক্যানসার, যেটা ম্যালিগন্যান্ট। বাকিগুলো কোনো কোনোটি আছে ক্যানসার নয়, সেগুলো লিভার টিউমার। তবে সাধারণভাবে আমরা লিভারের টিউমারকে লিভারের ক্যানসার বলে থাকি। লিভার সুস্থ অবস্থায় সাধারণত বড় হয় না।কিন্তু লিভারে টিউমার বা ক্যানসার দেখা দিলে তা অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এর মানে লিভারের যখন ক্যানসার হয়, লিভার বড় হতে থাকে। অনিয়ন্ত্রিত হয়ে এটি অনেক বড় হয়ে যায়। পেটের অনেক নিচে নেমে আসে। বড় হয়ে যায়, এটা কাজ করতে পারে না। এখান থেকে লিভারের টিউমারটি অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এটা ফুসফুস হতে পারে, মস্তিষ্ক হতে পারে। অন্যান্য যেকোনো অঙ্গ হতে পারে। তখন একটি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। লিভার ক্যানসার সত্যি খুব মারাত্মক একটি ব্যাধি।
লিভার ক্যানসার হলে কি কি উপসর্গ দেখা দিতে পারে?
প্রাথমিক স্তরে লিভার ক্যানসারের কোনো উপসর্গ না দেখা দিলেও পরবর্তী কালে কয়েকটি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সেইগুলি হল-
১) অস্বাভাবিক ভাবে ওজন হ্রাস
২) খিদে না পাওয়া
৩) পেটের ডানদিকে অস্বস্তি বা ব্যথা হওয়া
৪) বমি বমি ভাব বা কিছু খেলেই বমি হয়ে যাওয়া
৫) শরীর দূর্বল ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়া
৬) পেট ফুলে যাওয়া
৭) গায়ে হাত পায়ে কিংবা চোখে হলুদ ছোপ ছোপ পড়ে যাওয়া
৮) অস্বাভাবিক মলত্যাগ হওয়া
লিভার ক্যানসার কেন হয়?
লিভার ক্যানসারের মূল কারণ হলো হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি। এই দুটো ভাইরাস কীভাবে আমাদের শরীরে আসে, কীভাবে রোগ প্রতিরোধ করতে হয়, কীভাবে চিকিৎসা করতে হয় আমরা জানি। সে জন্য লিভার ক্যানসারকে আপনি যদি প্রতিরোধ করতে চান, তাহলে বি ও সিকে প্রতিরোধ করতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য কিছু কারণ রয়েছে। যেমন যদি কারো লিভার সিরোসিস হয়, কোনো কারণ ছাড়া বা যেকোনো কারণে, তাহলে এই সিরোসিস লিভারের রোগীর লিভার ক্যানসার হতে পারে। এ ছাড়া একটি কারণ রয়েছে আমাদের অঞ্চলে শস্যদানা আমরা যেগুলো খাই সেগুলো যদি খারাপভাবে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে, অনেক দিন যদি সংরক্ষণ করা হয়, এখানে একটি বিষাক্ত পদার্থ ফাঙ্গাস থেকে হয়, এর নাম হলো আফলাটক্সিন। আফলাটক্সিন যে দেশের যে খাবারে বেশি পরিমাণে আছে, সেই দেশের সেই জনসংখ্যার লিভার ক্যানসারের হার বেশি। আফ্রিকার একটি গবেষণায় এটা দেখা গেছে। যদি এই আফলাটক্সিনকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, খাবারকে বিশুদ্ধ করে বা সংরক্ষণকে উন্নত করে, তাহলে সেই লোকেদের লিভার ক্যানসারও কমে যায়। কাজেই এটিও একটি কারণ। তবে বি ও সি প্রধান কারণ। এ ছাড়া কেউ যদি মদ্যপান বেশি করে, এটি থেকে যদি সিরোসিস হয়, কিংবা অন্য যেকোনো কারণ থেকে যদি সিরোসিস হয়, ফ্যাটি লিভার থেকে যদি সিরোসিস হয়, সেই সিরোসিস ক্যানসার তৈরি করতে পারে।
এই রোগের কি চিকিৎসা হতে পারে?
লিভার ক্যান্সার নির্ণয়ের সহজ উপায় একটি নির্ভরযোগ্য আল্ট্রাসনোগ্রাম। কখনও কখনও সিটি-স্ক্যানেরও দরকার পরে। কিছু ক্ষেত্রে লিভার ক্যান্সার নির্ণয় করার জন্য আরও আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন এম.আর.আই.ও সিটি এনজিওগ্রামের দরকার পরতে পারে। রক্তের এ.এফ.পি. পরীক্ষাটি লিভার ক্যান্সারের একটি মোটামুটি নির্ভরযোগ্য টিউমার মার্কার। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত যে কোন ব্যক্তিরই উচিত প্রতি ৬ মাসে একবার এ.এফ.পি. ও আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা। তবে লিভার ক্যান্সারের ডায়াগনোসিস কনফার্ম করতে হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম আর এমন কি সিটি গাইডেড এফ.এন.এ.সি. জরুরি।