সারোগেসি কি? সারোগেসি একটি আইনত পদ্ধতি যার মাধ্যমে যেই দম্পতি সন্তান নিতে ইচ্ছুক কিন্তু সন্তান ধারনে অক্ষম তারা এই পদ্ধতির মাধ্যমে অন্য নারীর অনুমতি নিয়ে তার মাধ্যমে সন্তান লাভ করতে সক্ষম হন, এবংশিশু জন্মানোর পর তারাই হন শিশুর আসল মাতা-পিতা।সাধারণত গর্ভধারণে অক্ষম দম্পতিরাই এই পদ্ধতিকে বেছে নেয় সন্তান লাভের আশায়।বর্তমান সময়ে এই সারোগেসি পদ্ধয়ির প্রচলন ভীষনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই পদ্ধতি সেইসব দম্পতির মুখে যারা সন্তান চেয়েও পেতে অসফল হতেন।তাই বর্তমানে অনেক নারীই সারোগেট মা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন।তাদের জানার জন্য কিছু তথ্য নীচে আলোচনা করা হলঃ
একজন সারোগেট মা হওয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়। সারোগেট মা হতে গেলে কিছু জিনিসের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হয়।সারোগেট মায়েদের কাছ থেকে কিছু চাহিদা থাকে যেইগুলি না মিলে গেলে সারোগেট মা হওয়া সম্ভব নয়।
আইভিএফ সম্পর্কিত সমস্ত সমস্যা এবং স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত সমস্যার জন্য গৌতম খাস্তগীরের Birth Clinic-এ যান।
সারোগেসি কত ধরনের হয়?
১) পার্শিয়াল সারোগেসিঃ এই পদ্ধতিতে সন্তান জন্মানোর ক্ষেত্রে মা কোনো ভূমিকা পালন করেন না।এই পদ্ধতিতে বাবার শুক্রানু এবং সারোগেট মায়ের ডিম্বানু থেকে জন্ম হয় সন্তানের।
২) জেস্টেশনাল সারোগেসিঃ এও পদ্ধতিতে মায়ের ডিম্বানু নিয়ে ল্যাবে ভ্রুন তৈরী করা হয়।এরপর সারোগেট মায়ের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করে হয় ভ্রূনটি।এই পদ্ধতিটিই এখন বহুল প্রচলিত।
সারোগেট মা হওয়ার চাহিদাগুলি হলঃ
ব্যক্তিগত দিক থেকেঃ
১) সারোগেট মা হতে গেলে সেই নারীর বয়স কমপক্ষে ২৪ থেকে ৩৯ বছরের মধ্যে হতে হবে।
২) যেই নারী সারোগেট মা হবেন তাকে অ-ধূমপায়ী ব্যক্তি হতে হবে।এমনকি তিনি যেখানে বসবাস করেন সেখানেও যাতে কোনো ধূমপায়ী ব্যক্তি বসবাস না করেন সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩) শরীরের BMI ১৮ থেকে ৩২ এর মধ্যে থাকতে হবে।
৪) যিনি সারোগেট মা হবেন তার বিরুদ্ধে কোনো রকম অপরাধের অতীত থাকা চলবে না।
৫) সারোগেট মা হতে গেলে সেই নারীর নিজস্ব বাসস্থান থাকা জরুরী।
৬) সারোগেট মা হতে গেলে শারীরিক দিক দিয়ে এবং মানসিক দিক দিয়ে সুস্থ থাকা প্রয়োজন।
চিকিৎসাগত দিক থেকেঃ
১) একটি সন্তানের ইতমধ্যে জন্ম দিয়েছেন এমন নারীই সারোগেট মা হতে সক্ষম।
২) আগের বারের গর্ভধারনের সময় কিংবা প্রসবের সময় যদি কোনো সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে সেই নারী সারোগেট মা হতে পারবেন না।
৩) একজন গাইনোকলজিস্টের অনুমতি পত্রের প্রয়োজন।
৪) যেই নারী সারোগেট মা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তার অতীতে কোনো শারীরিক কিংবা মানসিক রোগ ছিল কিনা তা অবশ্যই দেখে নিতে হবে।
আর্থিক দিক থেকেঃ
১) কোনোরকম মেডিকেড থাকা চলবে না।
২) আর্থিক দিক থেকে অবশ্যই সচ্ছল থাকতে হবে।
সারোগেট মা হতে গেলে কী যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন?
সারোগেট মা হওয়া একটি খুব দায়িত্বপূর্ণ কাজ। কোন নারী যদি সারোগেট মা হতে চান তবে তাকে কিছু ব্যাপার মেনে নিতে হবে। সারোগেট মা হতে গেলে সেই নারীকে শুধু তার শরীর নয় তার সময় এবং শক্তিও দান করতে হয়। এমন একজন দম্পতি যারা কিনা সন্তান ধারণ করতে সক্ষম নন তাদের এই সাহায্য করার সিদ্ধান্ত এটি নেওয়া সত্যিই খুব একটা সহজ কাজ নয়।
এই সিদ্ধান্ত উদার মনের মানুষ না হলে নেওয়া যায় না। সারোগেট মা হওয়ার এই পুরো অভিজ্ঞতা ভীষণ কঠিন হলেও এর কিছু লাভ অবশ্যই আছে।
অনেক মানুষই অন্যকে সাহায্য করে আনন্দ পান। অন্যের মুখে হাসি দেখে নিজের সুখ খুঁজে নেন। একজন সারোগেট মা ও সেরমই একজন মানুষ যিনি নিজের কষ্টের বিনিময় অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে সাহায্য করেন।
কীভেব এই পুরো পদ্ধতিটি ঘটানো হয়?
পার্শিয়াল সারোগেসি পদ্ধতিতে মহিলার ডিম্বাণু এবং গর্ভ ভাড়া নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে সন্তানের ওপর মায়ের একটি জৈবিক অধিকার থেকে যায়। অন্যদিকে আইভিএফে মায়ের ডিম্বাণু স্পার্ম ব্যাংক থেকে আনা অন্য পুরুষের শুক্রাণুর সঙ্গে অথবা বাবার শুক্রাণু ডোনার মহিলার ডিম্বাণু নিষিক্ত করে ভাড়া দেওয়া মহিলার গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়।
যেহেতু গর্ভ ভাড়া দেওয়া মহিলা ডিম্বাণু ব্যবহার করা হয়নি সেহেতু ভূমিষ্ঠ সন্তানের ওপর সেই মহিলার কোন অধিকার বর্তায় না। তবে বাবা এবং মায়ের শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু নিষিক্ত করে যে ভ্রুন তৈরি করা হয় তার পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব নিয়ে কোনো সংশয় থাকেনা। তবে আইভিএফ পদ্ধতিতে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু নিষিক্ত করা কে টেস্টটিউববেবী মনে করা যাবে না কিছুতেই। কারণ টেস্টটিউব বেবি ভ্রূণ অবস্থা তেই মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠে।